গ্রাফিক্স কার্ড-এর আসলে কাজ কী?


গ্রাফিক্স কার্ড নিয়ে আমাদের মনে অনেক সংশয় আছে। বিশেষ করে যারা নতুন কম্পিউটার বিল্ড করতে চিন্তাভাবনা শুরু করি, তাদের কাছে এই বিষয়টি একেবারেই ঘোলাটে মনে হয়। গ্রাফিক্স কার্ড কম্পিউটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই গ্রাফিক্স কার্ড এবং সিপিইউ দুই মিলে কম্পিউটারের কাজের গতি বাড়িয়ে তোলে। 


আমাদের আজকের পোস্ট একেবারে নতুনদের উদ্দ্যেশে লেখা। যারা গ্রাফিক্স কার্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা শুরু করেছেন, কিন্তু ভালোভাবে এখনও বুঝে উঠতে পারেননি তাদের জন্য আজকের আয়োজন।  


অনেক সময় আমাদের মনে হয়, আচ্ছা আমরা যদি শুধু সিপিইউ কিনে গ্রাফিক্স কার্ড না কিনি তাহলে কেমন হয়, এতে কি আসলে পারফর্ম্যান্স ড্রপ করে? 


এই পোস্টে আমরা জানব গ্রাফিক্স কার্ড কী, কেন গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করা উচিত, গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার না করলে আমাদের কি সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এ সকল বিষয় নিয়ে। চলুন শুরু করা যাক।


গ্রাফিক্স কার্ড কী? 


গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট (জিপিইউ)-কে বলা হয়ে থাকে গ্রাফিক্স কার্ড বা ভিডিয়ো কার্ড। এটি একটি স্পেশাল ইলেকট্রনিক সার্কিট যা ছবি, ভিডিয়ো, অ্যানিমেশন ইত্যাদির ক্রিয়েশন এবং রেন্ডারিং-কে দ্রুত গতিতে সম্পাদন করে। এই জিপিইউ মূলত সিপিইউ-এর কাজকে আরও ভালোভাবে সম্পাদন করতে সাহায্য করে।  


সংক্ষেপে: জিপিইউ হচ্ছে একপ্রকার সিঙ্গেল-চিপ প্রসেসর যা মূলত ভিডিয়ো এবং গ্রাফিক্স পারফর্ম্যান্সকে বৃদ্ধি করে।  


গ্রাফিক্স কার্ড কয় ধরণের হয়?


জিপিইউ সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে। 


  • ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ (Integrated GPU) 

  •  ডিসক্রিট জিপিইউ  (Discrete GPU)


প্রথম জিপিইউ-এর নাম ইন্টিগ্রেটেড/অ্যামবেডেড জিপিইউ যা সিপিইউ’র সাথে সংযুক্ত থাকে এবং একই সাথে মেমরি শেয়ার করে। আর অন্য প্রকার জিপিইউ-কে বলা হয় ডিসক্রিট জিপিইউ যা সিপিইউ থেকে সম্পূর্ন আলাদা থাকে এবং নিজস্ব মেমরি কার্ড থাকে। 


ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউ


ইন্টিগ্রেটেড জিপিইউগুলো সিপিইউ-এর সাথে সংযুক্ত থাকে। এই ধরনের জিপিইউগুলো সাধারণত লো-পারফর্ম্যান্সকারী জিপিইউ। বড় ধরনের কোনে গেইমিং বা ভিডিয়ো রেন্ডারিং-এর ক্ষেত্রে একেবারে বাজে পরিস্থিতির মুখোমুখি করে তোলে। এই ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স সহ সিপিইউগুলোর সবচেয়ে জনপ্রিয় উদাহারণ হলো-  Ryzen 5 3400G।  এই ধরনের জিপিইউ যেহেতু প্রসেসরের সাথে সংযুক্ত থাকে, তাই আলাদা কোনো খরচ নেই। যা খরচ হয় একেবারে প্রসেসর কিনতেই কাভার হয়ে যায়। 

 

ডিসক্রিট জিপিইউ 


ডিসক্রিট জিপিইউগুলোর দাম তুলনামুলক বেশি হয়ে থাকে। মিড রেঞ্জের জিপিইউগুলোর দাম ৪০০-১০০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এই জিপিইউগুলোর পারফম্যান্স অনেক ভালো। হাই-এন্ডের যে কোনো কিছু করতে গেলে ডিসক্রিট জিপিইউ-এর বিকল্প নেই। গেমিং থেকে শুরু করে যত ভারি কাজ রয়েছে সবকিছু করতে গেলে ডিসক্রিট জিপিইউ-এর প্রয়োজন হয়।  


জিপিইউ এবং সিপিইউ এর মধ্যে পার্থক্য কি?


সিপিইউ এবং জিপিইউ দুটোই মূলত পারফর্ম্যান্স বৃদ্ধির জন্যই কাজ করে থাকে। এর মধ্যে সূক্ষ্ম পার্থক্য হচ্ছে সিপিইউ মূলত সিকুয়েনশিয়ালি কোরগুলো ব্যবহার করে, কিন্তু অপরদিকে জিপিইউ সাইমলটেনিয়াসলি কোরগুলো ব্যবহার করে। অর্থাৎ জিপিইউ-এর যদি ১০০টা কোর থাকে তাহলে এটি একইসাথে সবগুলো কোর ব্যবহার করে কাজ  করে থাকে।  অপর দিকে সিপিইউ ১, ২, ৪, ৬ এভাবে সিকুয়েনশিয়ালি কোরগুলো ব্যবহার করে। 



কেন আপনি জিপিইউ ব্যবহার করবেন?


দুই দশক আগেও  সকলে জানতো যে জিপিইউ শুধু রিয়েল-টাইম গ্রাফিক্স অ্যাপলিকেশন-এর কাজকে সহজ করতে পারে। যেমন গেইমিং। কিন্তু একবিংশ শতাব্দিতে এসে কম্পিউটার সায়েন্টিস্টগণ অনুধাবন করতে শুরু করলেন যে জিপিইউ-এর আরও নানাবিধ ব্যবহার রয়েছে। জিপিইউ কম্পিউটারের অন্যন্য অনেক জটিল সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতে সক্ষম। 


বর্তমানের গ্রাফিক্স কার্ডগুলো অনেক হাই-এন্ড অ্যাপলিকেশনের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এগুলো ব্যবহারের ফলে কাজের গতিও অনেক বৃদ্ধি পায়। এর প্রধান কারণ হলো- জিপিইউ সবগুলো কোর একসাথে সমান্তরালে ব্যবহার করতে পারে।


এছাড়াও আরও যেসকল কারণে আমরা গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করে থাকি তা হলো- 


পারফর্ম্যান্স-এর জন্য গ্রাফিক্স কার্ড


গ্রাফিক্স কার্ড আমরা মূলত পারফর্ম্যান্স বৃদ্ধির লক্ষ্যেই ব্যবহারক করে থাকি। কারণ সিপিইউ যেহেতু একসাথে সবগুলো কোর ব্যবহার করতে পারেনা, তাই আমরা গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করি। এতে করে গ্রাফিক্স কার্ড একসাথে সব কোর ব্যবহার করে স্টেবল একটা পারফর্ম্যান্স ধরে রাখতে পারে। 


গেমিং-এর জন্য গ্রাফিক্স কার্ড


বর্তমান সময়ের ভিডিয়ো গেইমগুলো অনেক বেশি শক্তিশালি, হাইপার-রিয়েলিস্টিক, এবং কমপ্লিকেটেড। কারণ এগুলোতে ব্যবহার করা হয়, অ্যাডভান্সড ডিসপ্লে টেকনোলজি যেমন- 4K স্ক্রিন, হাই-রিফ্রেশ রেইট ডিসপ্লে, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। এত সব এক্সটেনসিভ প্রসেসিং-এর জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের গ্রাফিক্স কার্ড। 


গ্রাফিক্স কার্ড-এর সুবিধা হলো- এটি 2D এবং 3D উভয়-এর জন্য গ্রাফিক্স রেন্ডার করতে সক্ষম। ফলে গেইমিং-এর ক্ষেত্রে হাই-পারফর্ম্যান্স, হাই-রেজ্যুলেশন, ফাস্টার ফ্রেইম রেট সবকিছু ধরে রাখা সম্ভব হয়। 


মেমরি ইউজ 


কম্পিউটারের বিল্ট-ইন গ্রাফিক্স কার্ড গুলো সাধারণত মেমরি শেয়ার করে থাকে। ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ডগুলো মূল মেমরির একটা অংশ দখল করে রাখে। আপনার প্রসেসর যদি ইন্টিগ্রেটেড গ্রাফিক্স কার্ডের হয়ে থাকে এবং আপনার মূল র‍্যাম যদি ৮ জিবি হয় তাহলে এর মধ্য থেকে ২.৫জিবি এরও বেশি মেমরি গ্রাফিক্স কার্ড দখল করে নেবে। ফলে আপনার মূল মেমরির জায়গা কমে যাবে।


এখন আপনি যদি ডিসক্রিট গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে আপনাকে মেমরি শেয়ার করতে হবে না। আপনার কম্পিউটারের মেইন র‍্যাম গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করবে না। গ্রাফিক্স কার্ড-এর মধ্যে থাকা মেমরি এটি ব্যবহার করবে।



ভিডিয়ো ইডিটিং-এর জন্য গ্রাফিক্স কার্ড


ভালো মানের গ্রাফিক্স কার্ড না থাকার জন্য ভিডিয়ো ইডিটর, গ্রাফিক্স ডিজাইনার এবং অনান্য ক্রিয়েটিভ প্রফেশনালদের রেন্ডারিং-এর জন্য প্রচুর পরিমাণে সময় নষ্ট করতে হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ের গ্রাফিক্স কার্ডগুলোর প্যারালালি প্রসেসিং ক্ষমতার কারণে ভিডিয়ো রেন্ডারিং, হায়ার ডেফিনেশনের গ্রাফিক্স কাজগুলো আরও দ্রুত এবং কম সময়ে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে। 


মেশিন লার্নিং-এর জন্য গ্রাফিক্স কার্ড


সময়ের সাথে প্রযুক্তির উন্নতির ফলে মেশিন লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই মেশিং লার্নিং এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স-এর মাধ্যমে কোনো কাজ করতে গেলে দ্রুত প্রসেসিং ইউনিটের প্রয়োজন হয়। আর জিপিইউ যেহেতু প্রসেসিং কাজগুলো অনেক দ্রুত সমান্তরালে করতে সক্ষম, সেহেতু অ্যাডভান্সড মেশিন লার্নিং-এ জিপিইউ’র ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এছাড়াও ডিপ লার্নিং টেকনোলজিতেও গ্রাফিক্স কার্ডের প্রয়োজন অনেক। 


ড্রাইভার সাপোর্ট


বাজারে যখন নতুন গেইম রিলিজ হয়, তখন পুরোনো ড্রাইভার ভালো সাপোর্ট দিতে পারেনা। যদি কম্পিউটারে গ্রাফিক্স কার্ড সংযুক্ত থাকে, তাহলে গ্রাফিক্স কার্ডে ম্যানুফেকচারার কোম্পানী কর্তৃক আপডেটেবল ড্রাইভ ইনস্টল করে নেয়া যায়। ফলে গেইমিং-এ আরও ভালো পারফর্ম্যান্স পাওয়া যায়। 


মনিটর বাড়াতে হলে কি গ্রাফিক্স কার্ড প্রয়োজন হয়?


যদিও সকলে গ্রাফিক্স কার্ড কিনেন গেমিং-এর জন্য, কিন্তু এর মধ্যে অনেকে আছে মনিটর-এর সংখ্যা বাড়ানোর জন্য গ্রাফিক্স কার্ড ক্রয় করে থাকেন। ডেডিকেটেড গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া ডাবল মনিটর বা তারও বেশি মনিটর সংযুক্ত করা বোকামির পর্যায়ে পড়ে। এটি অনেকটা ভাগ্যের ওপর ছুড়ে ফেলা ছাড়া উপায় নেই। 


কিছু কিছু মাদারবোর্ড রয়েছে যেগুলোতে মাল্টিপল ভিডিয়ো পোর্ট থাকে। যেমন ভিজিএ (VGA), ডিভিআই(DVI) পোর্ট ইত্যাদি। এছাড়া বেশিরভাগ মাদারবোর্ড-এ মাল্টিপল ভিডিয়ো পোর্ট থাকেনা। কিন্তু গ্রাফিক্স কার্ড ব্যবহার করলে বেশি সংখ্যক মনিটর সংযুক্ত করার অপশন থাকে। যদি আপনার ডুয়েল বা তারও অধিক মনিটর সংযুক্ত করার প্রয়োজন হয়, তাহলে একটি গ্রাফিক্স কার্ড সংযুক্ত করা অপরিহার্য। 



গেমিং-এর জন্য কোনটি গুরুত্বপূর্ণ: সিপিইউ নাকি জিপিইউ? 


গেমিং-এর জন্য সবাই এক বাক্যে বলবে জিপিইউ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তবে তাদের এটাও মাথায় রাখতে হবে যে জিপিইউগুলো মূলত ভালোভাবে ডিজাইন করা হয় সিপিইউ থেকে সর্বোচ্চ পারফর্ম্যান্স পাওয়ার জন্য। হ্যাঁ, জিপিইউ ইমেইজ প্রসেসিং, সিন, এবং অ্যানিমেশন ভিজুয়ালাইজেশনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে। তার মানে এই নয় যে সিপিইউ থেকে জিপিইউ-এর অবদান বেশি। 


সিপিইউ এবং জিপিইউ উভয়ই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বর্তমানে যেকোনো মর্ডান গেইম খেলতে হলে অবশ্যই হাই পারফর্মিং সিপিইউ এবং ভালো কনফিগের জিপিইউ ব্যবহার করা প্রয়োজন।  

 


Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস কোনগুলো?

সুপার অ্যাপ: একের ভিতর সব

কীভাবে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংক নির্ধারণ করে?