সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন: নবীনদের জন্য গাইড



সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (SEO) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় যখন আপনি একটি ওয়েবসাইট প্রকাশ করেন। ওয়েবসাইট প্রস্তুত করার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ট্রাফিক। গুগল সবার জন্য ফ্রি-তে ট্রাফিক গ্রহণ করার ব্যবস্থা করে রেখেছে । সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন-এর মাধ্যমে যেকেউ ফ্রি ট্রাফিক নিতে পারবে নিজেদের ওয়েবসাইটে।


গুগল-এ প্রতিদিন প্রায় ৩.৫ বিলিয়ন সার্চ হয়ে থাকে এবং প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি সার্চ গুগলকে হ্যান্ডেল করতে হয়। এই বিশাল পরিমান ফ্রি-ট্রাফিক থেকে আপনার সাইটে কিছু ট্রাফিক গ্রহণের সুযোগ থেকে নিশ্চয়ই বঞ্চিত করতে চাইবেন না।


গুগল-এ প্রথম পেইজে র‍্যাঙ্ক করা ওয়েবসাইটগুলো প্রায় ৭১ শতাংশ-এরও বেশি ক্লিক পেয়ে থাকে এবং দ্বিতীয় পেইজে সেটা কমে গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৬ শতাংশে। এরপর যত দূরে যাবে তত সার্চের ক্লিক এর পরিমাণ কমে যাবে। সুতরাং অধিক পরিমাণে ট্রাফিক পাওয়ার জন্য গুগল-এর প্রথমদিকে থাকাটা সবচেয়ে বেশি জরুরি।


ওয়েবসাইটকে গুগল-এর প্রথম পেইজে নিয়ে আসার মাধ্যমে বিশাল পরিমাণ ট্রাফিক ধরার পুরো প্রক্রিয়াটাকে বলা হয়ে থাকে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন। বর্তমান সময়ে কোনো ওয়েবসাইট তৈরি করার পর ওয়েবসাইটকে সার্চ ইঞ্জিনের জন্য অপটিমাইজ করা অপরিহার্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। 


গুগল-এ প্রতিনিয়ত মিলিয়ন বিলিয়ন ওয়েব পেইজ সংযুক্ত হচ্ছে। এর মাঝে আপনার তৈরিকৃত ওয়েবসাইটটি যদি গুগল-এর জন্য অপটিমাইজড না করে থাকেন, তাহলে আপনার ওয়েবসাইটটি সার্চ করার পর সেটি সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজের প্রথমদিকে খুঁজে না পাওয়ার  সম্ভাবনা প্রবল৷  


আমরা আজকের আলোচনার বিষয় নির্ধারণ করেছি ‘সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন: নবীনদের জন্য গাইড।’  এই পোস্টে আলোচনা করা হবে-


  • সার্চ ইঞ্জিন কী? 

  • সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কী?

  • কীভাবে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন এর উৎপত্তি



সার্চ ইঞ্জিন কী?


ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব-এ কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য খোঁজার জন্য যে সফটওয়ার ডিজাইন করা হয়েছে তাকে বলা হয় সার্চ ইঞ্জিন। 


সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন কী?


সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (এসইও/SEO) হচ্ছে এমন একটি উপায় যার মাধ্যমে একই সাথে ওয়েবসাইট-এর মান এবং অর্গানিক উপায়ে সার্চ ইঞ্জিন রেজাল্ট পেইজ থেকে ট্রাফিক বাড়ানোর জন্য কাজ করা হয়। 



এসইও-কে ভালভাবে বোঝার জন্য আপনাদের বেশকিছু বিষয় নিয়ে ধারণা থাকা দরকার। এই পোস্টে আমরা খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব-


কোয়ালিটি অভ ট্রাফিক


সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন-এর ক্ষেত্রে কোয়ালিটি অভ ট্রাফিক বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর যারা আসবে তারা যদি প্রাসঙ্গিক না হয় তাহলে আপনার সেই ভিজিটর আসার কোনো মূল্য নেই। 

ধরুণ আপনি বিক্রি করছেন ‘আইফোন'। কিন্তু আপনার ওয়েবসাইটে ভিজিটর আসছে স্যামসাং ফোন কিনতে ইচ্ছুক অডিয়েন্স। তাহলে বিষয়টা কি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে? মোটেও না। তাই সার্চ ইঞ্জিন থেকে যে ট্রাফিক  আসছে তারা প্রাসঙ্গিক কিনা এ বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ


কোয়ান্টিটি অভ ট্রাফিক


কোয়ান্টিটি অভ ট্রাফিক বলতে আপনার ওয়েবসাইটে অডিয়েন্স ক্লিক বা ভিজিট করার পরিমাণকে বোঝাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার অডিয়েন্স যদি প্রাসঙ্গিক হয়ে থাকে, তাহলে যত বেশি ট্রাফিক আসবে ততো বেশি ভালো হবে।


 অর্গানিক রেজাল্ট


অর্গানিক রেজাল্ট বুঝতে হলে আপনাকে আগে জানতে হবে পেইড এবং অর্গানিক রেজাল্ট এর পার্থক্য। আপনি যদি ভাল করে লক্ষ্য করে থাকেন, তাহলে সার্চ ইঞ্জিনগুলোতো দেখবেন দু'ধরণের সার্চ রেজাল্ট দেখা যায়। 


একদম ওপরের সারিতে ছোট করে অ্যাড লেখা রেজাল্টগুলো হচ্ছে পেইড রেজাল্ট। আর সাধারণভাবে যে রেজাল্টগুলো আমরা দেখতে পাই সেগুলো হচ্ছে অর্গানিক রেজাল্ট। সহজ কথায় যদি বলি, অর্গানিক রেজাল্ট-এর জন্য কোনো ধরণের অ্যাড ক্যাম্পেইন রান করতে হয় না কিন্তু পেইড অ্যাডস-এর জন্য অ্যাড ক্যাম্পেইন রান করার প্রয়োজন হয়।



যেভাবে এসইও শেখা শুরু করবেন


এসইও শেখা একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং ব্যয়বহুল। খুব কম লোকই সঠিক এসইও নিজে নিজে শিখতে পারেন কোনো কোর্সের সহায়তা ছাড়া। কোথাও কোর্স না করে অবশ্যই এসইও শেখা সম্ভব, যদি আপনি সঠিক পথে এগোতে থাকেন। আমরা এসইও সম্পর্কে আপনাকে একটা ভালো এবং স্বচ্ছ ধারণা দিতে পারব। শুধু আমাদের কন্টেন্টগুলো ভালো করে পড়ে নিলে, আপনি নিজেই ধারণা পেয়ে যাবেন কোন কোন বিষয়গুলোতে আপনার গ্যাপ আছে, এবং ঐ বিষয়গুলো শেখার উপায় পরবর্তীসময়ে নিজেই বের করে নিতে পারবেন। 


এসইও  শিখতে গেলে আপনাকে এই বিষয়গুলো ক্রমান্বয়ে জানতে হবে-


এসইও বেসিকস (SEO basics) 


যেকোন নতুন কিছু শিখতে গেলে সেখানে নতুন নতুন অনেক শব্দের সন্ধান পাওয়া যায়। যেগুলো হয়তো ডিকশনারি সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে পারেনা। আমি নিজে যখন এসইও শিখতে শুরু করেছিলাম, তখন আমাকে অনেক নতুন নতুন শব্দ কনফিউজড করে দিয়েছিল। তাই সেই অভিজ্ঞতা থেকে আমি এসইও বেসিকস পোস্টে অনেক নতুন, কঠিন, এবং গুরুত্বপূর্ন টার্মগুলো ব্যাখা করার চেষ্টা করব। 


সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে: ক্রলিং, ইন্ডেক্সিং, এবং র‍্যাঙ্কিং (Crawling, Indexing, And Ranking)

যেহেতু সার্চ ইঞ্জিন নিয়ে আমরা কাজ করছি বা করব, সেহেতু সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে সেটি সম্পর্কে জানা আমাদের জন্য অপরিহার্য। আপনি যদি এসইও শেখায় আগ্রহী  হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার সার্চ ইঞ্জিন কীভাবে কাজ করে তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। 


এসইও-তে আরও যা যা রয়েছে-


কি-ওয়ার্ড রিসার্চ (keyword research)


কি-ওয়ার্ড রিসার্চ সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন-এর জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ এটি এত বেশি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র, যেখানে একটি ভালো কি-ওয়ার্ড যদি টার্গেট করতে পারেন তাহলে সেটি আপনার ওয়েবসাইট-এর জন্য অনেক বেশি ট্রাফিক নিয়ে আসতে পারবে। 

আবার অনেক সময় দেখা যায়, অনেক ভালো মানের কন্টেন্ট লেখা হয়েছে। কিন্তু সঠিক কি-ওয়ার্ড টার্গেট করে লেখা হয়নি। ফলে সেটি ভালো কোন ফলাফল নিয়ে আসতে পারছেনা। তাই কি-ওয়ার্ড রিসার্চ বিষয়টি অনেক গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে হবে।


কম্পিটিশন অ্যানালাইসিস (Competition Analysis) 


এসইও-এর ক্ষেত্রে কম্পিটিশন অ্যানালাইসিস বিষয়টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আমাদের সকলের টার্গেটে থাকে গুগল-এর প্রথম পেইজে অবস্থান করা, সেহেতু এটাও দেখা দরকার সেখানে ভালো অথরিটির কোন ওয়েবসাইট আগে থেকে র‍্যাঙ্ক করে আছে কিনা। যেমন ধরুণ আপনি একটি কিওয়ার্ড সিলেক্ট করেছেন যা আগে থেকে র‍্যাঙ্ক করে আছে NY Times, BBC, CNN এর মতো বড় বড় অথরিটির সাইট। সেক্ষেত্রে আপনার সাইটের ক্রেডিবিলিটি কতটুকু তার ওপর নির্ভর করে আপনি ওদের সাথে কম্পিটিশনে যেতে পারবেন কিনা। 


আপনার সাইটও যদি বড় অথরিটির হয়ে থাকে তাহলে আপনি কম্পিটিশনে নামতে পারেন। অন্যথায় কম্পিটিশনে নেমে শুধু শুধু টাকা আর সময় নষ্ট ছাড়া আর কিছুই হবেনা। তবে বিষয়টি এমন নয় যে শুধু বড় অথরিটির সাইট র‍্যাঙ্ক করা থাকলে আর কেউ র‍্যাঙ্ক করতে পারবে না। তা মোটেও নয়। এক্ষেত্রে কি-ওয়ার্ডের ইন্টেন্ড যদি গ্যাপ থাকে তাহলে সেটি নিয়ে কাজ করলে সামনে যেতে পারবেন। 


এক্ষেত্রে কম্পিটিশন অ্যানালাইসিস ব্যপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ন। কারণ এই সেগমেন্টের কাজ হচ্ছে অন্য সাইটের ফাঁকফোকর বের করে গুগল থেকে ট্রাফিক আদায় করে নেওয়ার কৌশল। দক্ষ হওয়া ছাড়া এই ধরণের কাজ করা যায় না। ঝড়ে বক অনেকের মরে, কিন্তু সেটি আদতে ভালো কোনো বিষয় নয়। 


 

অন-সাইট অপটিমাইজেশন (On-Site Optimization)


এটিকে অনেকে অন-পেইজ অপটিমাইজেশন বলে থাকেন। ওয়েবসাইটের পোস্ট নিয়ে যে কারসাজি করা হয় তা-ই মূলত অন-সাইট এসইও। লেখার স্টাইলে কীভাবে H1, H2 ট্যাগগুলো বসাতে হয় যাতে গুগল সহজে বুঝতে পারে আপনার ওয়েবসাইটে কি কি আছে, কোনটা হাইলাইট করা দরকার, কোন অংশ ফিচার স্নিপেটে যাবে  এ সমস্ত বিষয় নিয়ে কাজ করা হয় অন-সাইট এসইওতে

অনপেইজ অপটিমাইজেশনের মূল উদ্দেশ্য ওয়েবসাইটের কন্টেন্টগুলো আরও সুন্দর করে উপস্থাপন করা। হ্যাঁ, হতে পারে মাঝে মাঝে গুগলকে বোঝানোর জন্য ওভার অপটিমাইজ করা দরকার। কিন্তু আসল উদ্দ্যেশ্য সাইটকে সুন্দর করে অডিয়েন্সের সামনে উপস্থাপন করা। 


টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO)


ওয়েবসাইট এর রেসপন্সিভ ডিজাইন, রোবট ডিরেকটিভস, ৩০৩/৪০৪ ইস্যু, লিঙ্ক স্ট্রাকচার, মেটা ট্যাগ, ডুপ্লিকেট কনটেন্ট, এইচটিএমএল, সিএসএস, জাভা স্ক্রিপ্ট, এবং ক্রলিং ইস্যু ইত্যাদি সব বিষয় নিয়ে টেকনিক্যাল এসইও গঠিত। টেকনিক্যাল এসইও র‍্যাঙ্কিং-এর জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ন একটি বিষয়। যেহেতু রিসেন্টলি পেইজ স্পিড অপটিমাইজেশনের ওপর সবাই জোর দিচ্ছেন, সেক্ষেত্রে টেকনিক্যাল এসইও অবশ্যই একটি বড় ফ্যাক্টর। 


টেকনিক্যাল ইস্যুগুলো ভালোভাবে অপটিমাইজ করা শিখলে সাইটের ওভারঅল পারফর্মেন্স বাড়ে। 



লিংক বিল্ডিং (Link Building) 


লিংক বিল্ডিং এখন এসইও-র একটি গুরুত্বপূর্ণ র‍্যাঙ্কিং ফ্যাক্টর। আপনার যতই ভালো কন্টেন্ট থাকুক যদি ভালো মানের ওয়েবসাইট থেকে রেফার করা না হয় বা ন্যূনতম লিংক বিল্ডিং করা না হয় তাহলে র‍্যাঙ্কিং করা গুগল-এ প্রায় অসম্ভব। এসইও-তে আপনাকে লিংক বিল্ডিং করতে হবেই। হয়তো  অনেক সময় লিংক বিল্ডিং ছাড়া সাইট র‍্যাঙ্ক করে, কিন্তু যখন আপনার কোন কম্পিটিটর আপনার থেকেও বাজে কন্টেন্ট দিয়ে ভালো মানের কয়েকটি লিংক বিল্ড করে, তখন দেখা যায় আপনার সাইটের র‍্যাঙ্ক কমে গিয়েছে। 


লিংক বিল্ডিং করা ছাড়া ভালো অথরিটি বিল্ড করা যায় না। সার্চ ইঞ্জিনে দীর্ঘস্থায়ীভাবে আপনার সাইটের অবস্থান পাকাপোক্ত করতে হলে লিংক বিল্ডিং করা অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। 






Comments

Popular posts from this blog

বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন মার্কেটপ্লেস কোনগুলো?

সুপার অ্যাপ: একের ভিতর সব

কীভাবে সার্চ ইঞ্জিন র‍্যাংক নির্ধারণ করে?